Friday, August 6, 2021

মাওলানা মুহাম্মাদ আযহারুল ইসলাম সিদ্দিকী (রহ.)


মাওলানা মুহাম্মাদ আযহারুল ইসলাম সিদ্দিকী (রহ.) -এর

জীবন দর্শন

বংশ পরিচয়

মাওলানা মুহাম্মাদ আযহারুল ইসলাম সিদ্দিকী (রহ.)-এর বংশ পরিচিতি সম্পর্কিত তার আত্মীয়-পরিজনদের নিকট হতে প্রাপ্ত তথ্যাদি নিম্নে উপস্থাপন করা হলাে-

তাঁর প্রপিতামহের নাম হেলাল উদ্দিন। পিতামহ ডাক্তার আব্দুল জব্বার ছিলেন বিলেত ফেরত একজন শল্য চিকিৎসক যিনি উর্দু ভাষা ও সাহিত্যে বুৎপত্তি অর্জন

করেছিলেন। পিতামহী ছিলেন একজন কাশ্মিরী রমণী। পিতামহের বাসস্থান ছিল বৃহত্তর টাঙ্গাইল জেলাধীন ‘বাদে হালালিয়া নামক সবুজে ঘেরা ছােট্ট একটি গ্রামে। ডাক্তার আব্দুল জব্বারের ৫ (পাঁচ) পুত্র ও তিন কন্যা সন্তানের মধ্যে তিন পুত্রই ছিলেন ডাক্তার। ফলে বাদে হালালিয়ায় তাদের বাড়িটি আজও ‘ডাক্তার বাড়ীনামে বিশেষ পরিচিত।

আর পিতা মাওলানা নাসিমুজ্জামান আজহারী[44]। তাঁর পৈত্রিক বাসভূমি ছেড়ে মানিকগঞ্জ[45] জেলার বর্তমান ঘিওর থানাধীন তেরশ্রীর ছােট পয়লাতে স্থায়ী আবাস গড়ে তােলেন। তিনি জীবনের শেষ অবধি তেরশ্রী কলেজে অধ্যাপনা করেন। ফার্সী ভাষায় তাঁর গভীর দখল ছিল বলে জানা যায়। এ ভাষায় কবিতা রচনাতেও তিনি অভ্যস্ত ছিলেন। একজন খাঁটি মুমিন ও মুত্তাকী মুসলিম হিসেবে

তিনি অত্র এলাকার সর্বস্তরের মানুষের নিকট সম্মানের পাত্র ছিলেন।[46]

44. তিনি মিশরের আল-আযহার বিশ্ববিদ্যালয় হতে উচ্চ শিক্ষার পাঠ সম্পন্ন করেন।

45. তৎকালীন বৃহত্তর ঢাকা জেলা।

নিম্নে ছকের মাধ্যমে মাওলানা মুহাম্মাদ আযহারুল ইসলাম সিদ্দিকীর সংক্ষিপ্ত বংশ তালিকা দেয়া হল-

হেলাল উদ্দীন

ডা. আব্দুল জব্বার। ১ মেয়ে; নাম জানা যায় নি।

                

ডা. রিয়াজ। ডা. তৈয়ব।

মাও: নাসিমুজ্জামান|| ডা. আমানুল্লাহ ১ ছেলে ও ৩ মেয়ে  

                   |                                     (নাম জানা যায়নি।

                 

মতিউল, আমিরুল*, মাইনুল ইসলাম,  আজহারুল ইসলাম, ৪ মেয়ে

* পিতার ইন্তিকালের পর মাওলানা সাহেব পিতৃস্নেহে যার তত্ত্বাবধানে লালিত-পলিত হন।

মাওলানা মুহাম্মাদ আযহারুল ইসলাম সিদ্দিকীর মাতার নাম মালেকা সিদ্দিকা। মাতার বংশের গােড়ার দিকে ইসলামের প্রথম খলিফা সিদ্দিকে আকবার হযরত আবু বকর (রা.)-এর সাথে সংযুক্ত।” [47] মাতুল মাওলানা আব্দুল শাকুর ছিলেন

অতিশয় আল্লাহভীরু। তার লজ্জা, সরলতা নিয়ে নিজ এলাকায়[48] আজও নানা রকম জনশ্রুতি রয়েছে। নিম্নে মাওলানার মাতার দিকের বংশ তালিকা দেয়া হল-

১. মালেকা ছিদ্দিকা

২. মাওলানা আব্দুশ শাকুর

৩. মুজাফফর আনী

৪. এনাম বক্স

৫. মুহাম্মদ সাঈদ

৬. মুহাম্মদ হাফিজ

৭. মুহাম্মদ নাসির

৮. আব্দুন নবী

৯, আবু তুরাব

১০. মুহাম্মদ আবু হােসেন।

১১. মুহাম্মদ আতিক

১২. মুহাম্মদ সায়াদ উদ্দীন

১৩, হামিদ উদ্দীন

১৪. আব্দুর রাজ্জাক

১৫. ইব্রাহীম

১৬. মুহাম্মদ জাহিদ

১৭, মুহাম্মদ হুসাইন

১৮, মুহাম্মদ আবুল কাসিম

১৯. মুহাম্মদ কুতুব উদ্দিন

২০. খাজা গরীবে নেওয়াজ সুলতানুল হিন্দ মইনুদ্দীন সাত্তারী (রা.)

২১. আব্দুল মজিদ মান্দার শরীফদার

২২. শরীফ জেন্দানিয়া জেন্দান

২৩, আবুল ইক্কল কুদ্স

২৪, ইউসুফ আহমেদ

২৫. আব্দুল আজিজ

২৬. আবুল কাসিম

২৭. আব্দুল্লাহ

২৮. জুনাইদ বাগদাদী

২৯, আবুল হুসাইন সাররী সাখতি

৩০. মাসুদ খিলদানি

৩১. রােকন উদ্দীন

৩২. সুলাইমান

৩৩, আইনুদ্দীন

৩৪, আবু আহমাদ

৩৫, কাসিম

৩৬. আব্দুর রহমান

৩৭. হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ)

47. পারিবারিক সূত্রে ডা. সাইফুল ইসলাম (এম.বি.বি.এস) বর্তমানে সাটুরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য

কমপ্লেক্সে মেডিক্যাল অফিসার সার্জারী কনসালট্যান্ট পদের বিপরীতে কর্মরত।

48. বৃহত্তর টাঙ্গাইল জেলার বর্তমান নাগরপুর থানাধীন পাইশানা গ্রাম।

জন্ম ও শৈশব

১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ২২ নভেম্বর পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী তাদের এদেশীয় দোসরদের সহযােগীতায় মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার তেরশ্রী বাজারসহ ৪টি গ্রামের ঘুমন্ত মানুষের উপর নির্বিচারে গুলি চালিয়ে এবং পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়ে ৪৩ জন নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করে। যে দিনটি আজও শ্রদ্ধার সাথে ‘তেরশ্রী দিবস' হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। সেই তেরশ্রীর ছােট পয়লা গ্রামে

১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে মাওলানা মুহাম্মদ আযহারুল ইসলাম সিদ্দিকী (রহ.) জন্ম গ্রহণ করেন।

শৈশব

মাওলানার শৈশব অতিবাহিত হয় তাঁর পিত্রালয়ে। বিচক্ষণ পিতার বন্ধুত্বপূর্ণ তত্ত্বাবধান ও দ্বীনদার মাতার অকৃত্রিম স্নেহের আবেশে শরীর ও মনে পরিপুষ্ট হয়ে বেড়ে উঠতে লাগলেন তিনি। সৃজনশীলতা ও প্রখর স্মৃতিশক্তির এক অপূর্ব সমন্বয় তার পরবর্তী জীবনের ভিত গড়েছিল শৈশবেই। এ সময় হতেই অন্যান্য শিশুদের তুলনায় তাঁর স্বাতন্ত্র ছিল লক্ষণীয়। অনুসন্ধিৎসু বালক আযহার এভাবেই কৈশাের পেরিয়ে তার পরিণত জীবনের পথচলায় অগ্রসর হতে

লাগলেন।

49. দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন, ২২ নভেম্বর ২০১০।

50. মাওলানার মেঝ ভাই মুহাম্মদ আমীরুল ইসলাম সিদ্দিকী সূত্রে।

প্রাথমিক শিক্ষা

বিজ্ঞ পিতার নিকটই তার কুরআন মাজীদ শিক্ষার হাতেখড়ি। এছাড়া সাধারণ বিষয়সমূহ পাঠদানের জন্য গ্রামের জনৈক পণ্ডিত মশাইকে নিয়ােগ দেয়া হয়।

এরপর তিনি নিজ গ্রামেই প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন।

এরপর তেরশ্রী জমিদার হাইস্কুলে[51] ৭ম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। বাল্যকাল হতেই তিনি খুঁজে বেড়াতেন তাঁর স্রষ্টাকে। যেহেতু একটি সম্ভ্রান্ত মুসলিম পারিবারিক আবহে তাঁর বেড়ে উঠা তাই শৈশবের লালিত ধর্মীয় আদর্শেই স্রষ্টার সন্ধান পাবেন এ প্রত্যাশায় মাদ্রাসা শিক্ষার প্রতি তীব্র আগ্রহবােধ করেন। এরপর মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া উপজেলার মাহিষালােহা জাব্বারিয়া হাই মাদ্রাসায় ভর্তি হন ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে। এখান হতে মেধার স্বাক্ষর রেখে বার বছরের কোর্স মাত্র তিন বছরে সম্পন্ন করেন।

উচ্চ শিক্ষা

জ্ঞানের প্রতি ছিল তার অদম্য পিপাসা। মহিষালােহা জাব্বারিয়া হাই মাদ্রাসা[52] হতে ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে প্রথম শ্রেণীতে ‘হাই মাদ্রাসা পরীক্ষায় পাশ করেন যা বর্তমানের ফাজিল সমমান। উল্লেখ্য, পূর্ববঙ্গ মাদ্রাসা শিক্ষা বাের্ডের অধীনে সে বছর ১৪,৫০০ শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। তন্মধ্যে মাত্র ৪৭ জন শিক্ষার্থী প্রথম শ্ৰেণী লাভ করেন। এরপর তিনি চট্টগ্রাম সরকারী কলেজে ভর্তি হন। এ সময়ে তিনি ব্যক্তিগত ভাবে দারুল উলুম মইনুল ইসলাম (হাটহাজারী) মাদ্রাসার উস্তাদগণের নিকট হতে উচ্চতর দ্বীনি শিক্ষা লাভ করেন।

কৃতিত্বের সাথে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধীনে ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে একই বিভাগের অধীনে এম.এ ডিগ্রী লাভ করেন। ঐ বছরই তিনি তদানীন্তন ঢাকা সিটি ল কলেজ হতে এলএল.বি ডিগ্রী লাভ করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠজীবনেই মূলত তাঁর বহুমাত্রিক জ্ঞানার্জনের ক্ষেত্রগুলাে তৈরি হচ্ছিল। এ পর্যায়ে এসে তার পঠন-পাঠনে নতুন মাত্রা যােগ হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের

কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারকে তিনি ব্যবহার করেছিলেন পাঠ্যবহির্ভূত নানাবিধ গ্রন্থের উৎস হিসেবে। এসময়ে তিনি বেছে নিয়েছিলেন দর্শন, বিজ্ঞান, ধর্মতত্ত্ব, সাহিত্য প্রভৃতি

বিষয়কে। বিশেষত নিউটন ও আইনস্টাইনের বিজ্ঞান-সাধনা তাঁকে এ সময় গভীরভাবে আকৃষ্ট করেছিল। মহাকাশ বিজ্ঞান ও জীববিজ্ঞান হয়ে উঠে তাঁর বিদ্যার্জনের মূল আকর্ষণ। সেইখানে বিজ্ঞান ও দর্শনকে মিলিয়ে পড়ার ইচ্ছে

থেকে একটি নির্দিষ্ট দার্শনিক বিশ্বাসে উপনীত হতে চেয়েছিলেন তিনি। তাঁর পঠন-পাঠনের বিষয় ক্ষেত্রগুলােকে যেভাবে চিহ্নিত করা যায়, তাহলাে-

ক. ইসলামী দর্শন: তাসাউফ, বিশেষত ইমাম গাজ্জালী (রহ.) প্রণীত দর্শন চিন্তা।

খ. তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব : প্রধান চারটি ধর্ম ও বিভিন্ন লৌকিক ধর্ম এবং তাদের বিবর্তন। প্রাচ্য দর্শন-উপনিষদ, বেদান্তিক দর্শন।

গ, পাশ্চাত্য দর্শন : হেগেলীয় ভাববাদ, ডারউইন ও পেনসারের যান্ত্রিক বিবর্তনবাদ, হেনরী বার্গসের সৃজনমূলক বিবর্তনবাদ, মার্কসবাদ, বাট্রান্ড রাসেলের সংশয়ী রচনাবলী ইত্যাদি।

সাহিত্য

ঘ. বিদেশী সাহিত্য : ঔপন্যাসিক ডিকেন্স, কবি ও নাট্যকার শেক্সপীয়র ও অন্যান্য।

ঙ. বাংলা সাহিত্য : কাযিম আল কোরায়েশী (কায়কোবাদ), মীর মােশাররফ হােসেন, কাজী নজরুল ইসলাম, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, জসীম উদ্দীন প্রমুখের সাহিত্য পড়েছিলেন বিশেষভাবে। বিশেষত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতায় প্রতিফলিত নিসর্গ ও আধ্যাত্ম-চেতনা দ্বারা তিনি অনেকটাই প্রভাবিত হয়েছিলেন।

51. অত্র এলাকার মধ্যে নামকরা স্কুল ছিল।

52. যা পরবর্তীতে সরকারী সিদ্ধান্তে হাই স্কুলে রূপান্তরিত হয়।

বৈবাহিক জীবন

তিনি ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা জেলার ধামরাই উপজেলার গােলাকান্দা গ্রামের তৎকালীন গ্রাম সরকার জনাব আফাজ উদ্দীন সরকারের বড় মেয়ে নুরুন্নাহার হেনার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। উল্লেখ্য, নুরুন্নাহার হেনা ১৯৫৮।খ্রিস্টাব্দে স্থানীয় ব্যারস হাই স্কুল হতে এসএসসি পাশ করেন। তাঁর ঔরসে ২ ছেলে ও ৭ মেয়ে জন্ম গ্রহণ করেন। তারা হলেন-

১। জেসমিন সিদ্দিকা

২। ড. মুহাম্মাদ মনজুরুল ইসলাম সিদ্দিকী

৩। ইয়াসমীন সিদ্দিকা

৪। নাসরিন সিদ্দিকা

৫। মুনিয়া সিদ্দিকা

৬। মিলি সিদ্দিকা

৭। শিফা সিদ্দিকা

৮। আজিজা সিদ্দিকা

৯। মুহাম্মদ মুনিরুল ইসলাম সিদ্দিকী

তাঁদের সন্তানাদি

১। জেসমিন সিদ্দিকা: ২ ছেলে ২ মেয়ে।

২। ড. মুহাম্মাদ মনযুরুল ইসলাম সিদ্দিকী : ১ ছেলে ১মেয়ে।

৩। ইয়াসমীন সিদ্দিকা  : ৩ মেয়ে।

৪। নাসরিন সিদ্দিকা  : ৪ ছেলে ১ মেয়ে

৫। মুনিয়া সিদ্দিকা   : ১ ছেলে ১ মেয়ে।

৬। মিলি সিদ্দিকা   : ১ ছেলে ২ মেয়ে।

৭। শিফা সিদ্দিকা   : ২ ছেলে ১ মেয়ে।

৮। আজিজা সিদ্দিকা  : ২ ছেলে ১ মেয়ে

৯। মুহাম্মদ মুনিরুল ইসলাম সিদ্দিকী : ২ মেয়ে

কর্মজীবন

কর্মজীবনের শুরুতে তিনি ১৯৫৮-১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত প্রায় ৪ বছর বিভিন্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় কিছুকাল বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টে আইন পেশায় নিয়ােজিত ছিলেন।

পরবর্তীতে ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে তিনি মানিকগঞ্জ দেবেন্দ্র কলেজে অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক হিসেবে যােগদান করেন। দীর্ঘদিন তিনি অত্র বিভাগের বিভাগীয় প্রধান

হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। যােল বছরের সফল অধ্যাপনা শেষে তিনি ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে স্বেচ্ছা-অবসর গ্রহণ করেন। যদিও তাঁর অবসর গ্রহণের আবেদন পত্র আজও নামঞ্জুর অবস্থায় রয়েছে। তাঁর পাঠদান পদ্ধতি ছিল খুবই হৃদয়গ্রাহী। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আন্তরিক ও বন্ধুত্বপূর্ণ ছিল তাঁর ব্যবহার।

মাওলানা সাহেবের ঘটনাবহুল ও কীর্তিমান জীবনের কয়েকটি পরিচিতি

ভাষা সৈনিক ১৯৫২ সালের ভাষা অন্দোলনে হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ আহারুল ইসলাম সিদ্দিকী (রহ.) শহীদ সালাম, শহীদ বরকত, শহীদ রফিকের সাথে মাতৃভাষার জন্য ঐ দিনের কর্মসূচী অনুযায়ী মিছিল করেছিলেন এবং বজ্রকণ্ঠে বলেছিলেন ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই'। তাঁর ভাষায় “যখন পাকিস্তানি মিলিটারিরা মিছিলে গুলি চালালাে আমার ডান পাশদিয়ে গুলিটা গিয়ে শহীদ রফিকের গায়ে লাগল। সাথে সাথে মানুষগুলাে মাটিতে পরে মারা গেল। গুলিটা আর একটু বাম দিকে আসলেই আমার গায়ে লাগতাে”। আল্লাহর ওলীকে দিয়ে আল্লাহপাক দ্বীনের কাজ করাবেন তাই আল্লাহপাক তাঁকে হিফাযত করেছিলেন।

নিমের কবিতাটি থেকে এ ঐতিহাসিক ঘটনার প্রমাণ পাওয়া যায়। ১৯৭৮ সালে একুশে ফেব্রুয়ারী উপলক্ষে এই কবিতাটির প্রথম কয়েকটি লাইন লিখেছিলেন ড. মুহাম্মাদ মনজুরুল ইসলাম সিদ্দিকী এবং বাকী কবিতা সমাপ্ত করেছিলেন তাঁর পীর ও পিতা কুতুব উল আকতাব হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ আযহারুল ইসলাম সিদ্দিকী (রহ.)। কবিতাটির বানানগুলাে ১৯৭৮ সালে প্রচলিত বাংলা বানান অনুযায়ী রাখা হল।

                              (২১ ফেব্রুয়ারী)

রক্ত মাখানাে দিনটি আবার বাংলায় এলাে ফিরে

শােক সাগরের খুন ভরা ঢেউ খেলে যায় ঘরে ঘরে

হু হু করে উঠে রিক্ত হৃদয় আসিলে ফেব্রুয়ারী

একুশ তারিখে বরষপঞ্জি নিয়ে আছে আহাজারি

মাতৃ ভাষারে অমর করিতে বীর বাংগালী প্রাণ

শহীদ হয়েছে ভাংগিয়া বিদেশী লৌহের জিন্দান

শহীদ হয়েছে শহীদ ছালাম আর বীর বরকত

যারা চেয়েছিল বরষিতে হেথা আল্লাহর রহমত

যুগে যুগে মােরা জানি

ভাষার গলায় ফাঁসি দিলে কেউ শােনেনি তাহার বাণী

মধুর ঝর্ণা ধারার মতই বাংলা ভাষার বােল

দোয়েল-শ্যামার-কোকিলের সুরের মতই কলরােল

এই ভাষাতেই স্বপ্ন আশার জাল বুনি মনে মনে

শান্তির ঘর বিরচন করি এই ভাষা নিকেতনে

রাখালিয়া বাঁশী এ ভাষায় বাজে, নিজেরে হারায়ে দেই

ভাই বলে ডাকি কত অজানারে, বক্ষে জড়িয়ে নেই।

এ ভাষায় হাসি, এ ভাষায় কাদি, মা বােন বলে ডাকি

বাংলা ভাষা হারালে বাংগালী জাতি হােয়ে যাবে ফাকি

যাহাদের ঘরে কোন ধন নাই, জীবনের জৌলুস

মুখে শুধু ভাষা, তা-ও কেড়ে নিলে রবে বাংগালীর হুস?

তাইতাে শহীদ শহীদ হয়েছে বরকত তার সাথে

সালাম দিয়েছে আখেরী ছালাম স্মরণীয় হয়ে প্রাতে ॥

কলিজায় ভরা আগুনের ঝড় কাঁদে তাহাদের মা

একুশে ফেব্রুয়ারীর আকাশে আজও তার ঝঞা

গােধুলী আকাশে রাংগা হােয়ে উঠে ধুসর পৃথিবী জুড়ে।

ভােরে আকাশে শিশির হইয়া পাতা পল্লবে ঝরে ॥

ফিরে ফিরে আসে সেই ফেব্রুয়ারীর অতি সুকরুন ধ্বনি

হারাইল যারা ফিরিবে কি তারা বসে বসে তাই গুণি।”

53. মাসিক ভাটিনাও, প্রাগুক্ত, মার্চ, ২০০৮, ৪, সংখ্যাঃ ৭ম

 

গবেষণা ও কিতাবসমূহ

যখন বিজ্ঞান চর্চার উপর না-জায়েফের ফতােয়া ছিল, চশমা ব্যবহারটাকেও জায়েয হবে না বলে মনে করা হতাে, গােড়া আলেম ও ভন্ড পীরদের কারণে সমাজে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হচ্ছিল, ঠিক সে সময় তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম ও নিরলস গবেষণা করে ফুগান্তকারী বিজ্ঞানভিত্তিক মহা

কিতাবসমূহের মাধ্যমে সমাজ থেকে কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাস ও ধর্মীয় গোঁড়ামী বিদূরত করেছিলেন। সেই মহা কিতাবসমূহের নাম-

১. “বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে পর্দা” ২. “তারানায়ে জান্নাত"

 ৩. “মহাসপ্ন" ৪. “মহা ভাবনা" ৫. “জীবন রহস্য ও দেহত্ত্ব"

৬. “পীর ধরার অকাট্য দলিল" ৭. “মা'রেফতের ভেদত্ত্ব"

৮. “ধূম পিপাসা সর্বনাশা"

মানিকগঞ্জ দরবার শরীফ প্রতিষ্ঠা

১৯৬৫ সালে বরিশালের হুজুর কেবলা আলহাজ্ব হযরত মাওলানা সৈয়দ মােঃ এসহাক (রহঃ) এর হুকুম ও দোয়ার মাধ্যমে মানিকগঞ্জ দরবার শরীফ প্রতিষ্ঠা করেন ও সমগ্র

বিশ্বে ইসলামের এলমে শরীয়ত ও এলমে মারেফতের আলাে ছড়িয়ে দেয়ার অক্লান্ত পরিশ্রম শুরু করেন। মাইলের পর মাইল, কখনাে পায়ে হেটে, কখনাে সাইকেল চালিয়ে

হুজুর কেবলা মাহফিল করতে যেতেন এবং মানুষকে ইসলামের পথে আনতে লাগলেন।

উল্লেখ্য যে, বরিশালের হুজুর কেবলা জীবিত থাকা অবস্থায় তিনি কখনােই নিজের নামে বয়াত (মুরিদ) করেননি, এটা তিনি আদবের খেলাফ মনে করতেন । সমাজে হাক্কানী

আলেম তৈরীর লক্ষ্যে এই মহান আল্লাহর ওলী ১৯৭৭ সালে জামি'আ-আরাবিয়া সিদ্দিকীয়া দারুল উলুম মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। যেখানে আদব, এলমে শরিয়ত ও এলমে মারেফত ইত্যাদি বিষয়ের পাশাপাশি আরবী, উর্দু, বিজ্ঞান ও ইংরেজী বিষয়ের পূর্ণাঙ্গ তালিম দেয়া হয়। আধ্যাত্মিক জগতের এই দিকপাল তাঁর অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে সমগ্র বিশ্বের প্রায় এক কোটি ত্রিশ লক্ষ মানুষকে সঠিক ইসলামের পথে

 

পরিচালিত করে মহান আল্লাহপাকের সাথে ভালবাসা স্থাপন করেছেন।

মানিকগঞ্জ দরবার শরীফ হচ্ছে হুজুরপাক (সাঃ)-কে ভালবাসার এবং তাঁর সুন্নতকে সঠিকভাবে

মানার দরবার শরীফ। তিনি প্রতি বছর অগ্রহায়ণ ও ফাল্গুন মাসে দুইবার বাৎসরিক ইসলামী মহা-সম্মেলনের আয়ােজন করেন। যেখানে মাত্র তিন দিনে মানুষকে এলমে

মা'রেফত ও এলমে শরীয়তের পূর্ণাঙ্গ দিক নির্দেশনার মাধ্যমে ইসলামী জীবন ব্যবস্থা তথা হুজুরপাক (সাঃ) এর পূর্ণাঙ্গ সুন্নত পালনের জন্য পরিপূর্ণ শিক্ষা দান করা হয়।

যেখানে দেশ বিদেশ থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষ ও ভক্তবৃন্দ এলমে শরিয়ত ও এলমে মা'রেফতের তালিম নিতে এবং নবীপ্রেমে মশগুল হয়ে সুন্নতের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে

পাগলের মত ছুটে আসেন। এখানে পর্দা, আদব, আখলাক, এলেম থেকে শুরু করে তাসবিহ, পাগড়ী, মেস্ওয়াক পর্যন্ত সকল সুন্নতের পুঙ্খানুপুঙখ পরীক্ষা নেয়া হয়। দেশবিদেশ থেকে আগত বিভিন্ন আলেম-ওলামাগণ মন্তব্য করেছেন-

 

 “মানিকগঞ্জ দরবার শরীফ সুন্নত ও আদবের দরবার”। পৃথিবীর সমস্ত জ্ঞানের উৎস হচ্ছে কোরআন শরীফ

ও হাদিস শরীফ। তার বাস্তব প্রমাণ মানিকগঞ্জ দরবার শরীফে গেলে স্বচক্ষে অবলােকন করা যায়।

মানিকগঞ্জ দরবার শরীফে শিক্ষিত, জ্ঞানী ও আলেমের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেশী।

দুনিয়াবীভাবে পর্দার আড়ালে

👇🏻

হুজুরপাক (সাঃ) যখন দুনিয়া থেকে বিদায় হয়ে যাবেন তার কিছুদিন পূর্বে তাঁর আদরের নাতীদ্বয় হযরত ইমাম হাসান (রাঃ) ও হযরত ইমাম হােসাইন (রাঃ) একই রাতে একই স্বপ্ন দেখে ভয়ে নিচুপ হয়ে পরেছিলেন। তখন তাদের সকল কাজের উৎস, প্রাণাধিক প্রিয় নানাজানের (সাঃ) নিকট এসে দুই ভাই বললেন, “নানাজান আমরা দুইভাই গতকাল রাতে একই স্বপ্ন দেখে ভয় পেয়েছি”। হুজুরপাক (সাঃ) বললেন নানাভাই কি দেখেছ আমাকে বল, তখন বড় ভাই ইমাম হাসান (রাঃ) বললেন “আমি দেখলাম আমাদের চারিদিকে খুব বিপদ, প্রচন্ড ঝড় হচ্ছে, কোথাও আশ্রয় পাচ্ছি না, দুই ভাই ভয়ে দৌড়াদৌড়ি করছি, এমন সময় একটি বড় গাছ দেখে দুই ভাই ঐ গাছের নিচে গিয়ে আশ্রয় নেই, একটু পরে হঠাৎ জোরে বাতাস এসে গাছটিকে ভেঙ্গে নিয়ে যায়।”

 

তখন দয়াল নবীজী হুজুর (সাঃ) কনিষ্ঠ নাতী ইমাম হােসাইন (রাঃ) কে বললেন “নানাভাই তুমি কি দেখেছ বল?” তিনি বললেন “নানাজান আমি হুবহু একই স্বপ্ন দেখেছি”। তখন দয়াল নবীজী হুজুর (সাঃ) কলিজার টুকরা দুইভাইকে জড়িয়ে ধরে চোখের জলে বুক ভাসিয়ে বললেন “ভাইদ্বয় খুব শিঘ্রই তােমরা তােমাদের নানাভাইকে হারাবে, তােমাদের নানাভাই দুনিয়া থেকে বিদায় হয়ে যাবে” এ কথা শুনে শিশু ভাইদ্বয় (রাঃ) গড়াগড়ি দিয়ে কাঁদতে শুরু করেছিলেন। তাই দুনিয়া থেকে বিদায় হওয়ার কথা সর্বপ্রথম নাতী ভাইকে বলাটাও সুন্নত। হুজুরপাক (সাঃ) এর খাঁটি ওয়ারিস দয়াল মাের্শেদ কেবলা দুনিয়া থেকে বিদায় হওয়ার কথাটি বিদায় হওয়ার কিছুদিন পূর্বে সুন্নতস্বরূপ তাঁর আদরের নাতী-নাতনী ভাইদেরকে বলেছিলেন। তিনি সারা জীবন অজস্র পরিশ্রমের ফলশ্রুতিতে ৬৭ বছর বয়সে অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন।

সেদিন ছিল ২০০০ সালের ২১ শে মে রবিবার দিবাগত রাত্রি অর্থাৎ সােমবার, মাের্শেদ কেবলা কন্যাদেরকে বললেন আমাকে ভাল করে গােসল করিয়ে দাও। সবাই তাঁকে গােসল করিয়ে দিলেন। বেশ কিছুদিন অসুস্থ থাকার কারণে খুব অল্প আহার করতেন। কিন্তু সেদিন বললেন, “আমাকে খাবার দাও আমি আজকে খাব”। তিনি ভাল করে খাওয়া দাওয়া করলেন, তারপর এস্তেঞ্জা সেরে ওজু করে বিছানায় শুতেই শরীর খুব খারাপ লাগছিল। বিছানায় শুয়ে বড় বড় শ্বাস নিতে নিতে “পাছ আন ফাছ” সবক (নিঃশ্বাস নিতে আল্লাহ্ ছাড়তে হু) করছিলেন। কিছুক্ষণ সবক করতে করতে সমস্ত শরীর নিস্তেজ হয়ে যায় এবং বিশ্বের প্রায় এক কোটি ত্রিশ লক্ষ মানুষের নয়নমনি, কুতুব-উল-আকতাব, অত্যন্ত উচ্চ পর্যায়ের আধ্যাত্মিক জ্ঞান সম্পন্ন হুজুরপাক (সাঃ) এর এই খাঁটি ওয়ারিস সকলের বুক খালি করে দুনিয়াবীভাবে পর্দার আড়াল হয়ে গেলেন।

বর্তমানে মাের্শেদ কেবলার বড় সাহেবজাদা ও প্রধান খলিফা আলহাজ্ব হযরত মাওলানা ড. মুহাম্মদ মনযুরুল ইসলাম সিদ্দিকী সাহেব বি.এ. (অনার্স); এম.এ; এম.এম;এল.এল.বি; (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) পিতার নির্দেশ ও দোয়ার মাধ্যমে বাৎসরিক ইসলামী

মহা-সম্মেলন ও মানিকগঞ্জ দরবার শরীফ অবিকল পিতার মতই পরিচালনা করছেন।

বর্তমান পীর সাহেব কেবলা (আব্বা হুজুর) সম্পর্কে বাৎসরিক ইসলামী মহা-সম্মেলনে মাের্শেদ কেবলা বলেছিলেন “তােমাদের জন্য আমি দরদভরা একজন দরদী মনের মানুষকে রেখে গেলাম, আমি আমার আমলে যতটুকু ইসলামের প্রচার এবং প্রসার করেছি আমার আদরের ছেলে, আল্লাহর বান্দা তার আমলে এর চাইতে দশ গুন বেশী

প্রচার এবং প্রসার করবে ইনশাআল্লাহ্। বাপকা বেটা সিপাই কা ঘােড়া। ছেলে শক্তিশালী হলেই পিতা শক্তিশালী হয়। আমার এ ছেলে আল্লাহর বান্দা দুনিয়াতে আসার

পূর্বে আমি চোখের পানি ফেলে আল্লাহ্পাকের নিকট দোয়া করেছিলাম মাবুদ আমাকে একটি ছেলে সন্তান দেন আমি এই সন্তানকে ইসলামের কাজের জন্য নিয়ােজিত করবাে,

আল্লাহপাক আমার এ দোয়া কবুল করেছেন” (আলহামদুলিল্লাহ্)।

যেই মহান আল্লাহর

ওলী চোখের পলকে একজন জাহান্নামী মানুষকে আল্লাহর ওলী বানাতে পারতেন সেই মাের্শেদ কেবলা চোখের পানি ঝরিয়ে যাকে দুনিয়াতে এনেছেন সেই মানুষটি কেমন

হতে পারে জ্ঞানী মানুষ খুব সহজেই তা বুঝাতে পারেন। আমরা সবাই যেন এই মহানেয়ামতের সঠিক কদর করতে পারি। উল্লেখ্য যে, মানিকগঞ্জ দরবার শরীফের

সকল ভক্তবৃন্দ ধর্মীয় গােড়ামী, কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাস থেকে সম্পূর্ণরূপে নিরাপদ, কারণ মানিকগঞ্জ দরবার শরীফের পীর সাহেব হুজুর, একজন শিক্ষাবিদ হিসাবে শুধু

বাংলাদেশেই নয়, সমগ্র বিশ্বে অন্যতম। পাক-ভারত উপমহাদেশে এত উচ্চ শিক্ষিত পীর নেই বললেই চলে। একজন খাটি আল্লাহর ওলি, জাইয়েদ আলেম ও একজন

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদের সম্বতে এসে মহান আল্লাহপাকের সান্নিধ্য অর্জনের লক্ষ্যে সকলে আমন্ত্রিত।



শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

1 comment:

  1. WynnBET casino games and rewards - Dr.MCD
    Wynn Las 파주 출장샵 Vegas Casino 경주 출장샵 and Resort Review, Nevada, United 광주 출장샵 States In 충청북도 출장안마 addition, the casino offers 광주 출장안마 over 200 slot and table games, over 5,000 video poker games,

    ReplyDelete